ঢাকাই জামদানি শাড়ির যত্ন: দীর্ঘদিন নতুনের মতো রাখার উপায়
ঢাকাই জামদানি শাড়ি শুধু একটি পোশাক নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য ও গর্বের প্রতীক। তবে জামদানি শাড়ি অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও কোমল হওয়ায় সঠিক যত্ন না নিলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এটি অমূল্য সম্পদ হয়ে টিকে থাকতে পারে।
১। শাড়ির পারে ফলস লাগানো।
জামদানি শাড়ি তুলনামূলকভাবে পাতলা। তাই ব্যবহার শুরু করার আগে অবশ্যই পারে ফলস লাগিয়ে নিন। এটি শাড়ির প্রান্তকে মজবুত করবে এবং ঘষা খেয়ে ছিঁড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।
২। পানি থেকে সতর্ক থাকুন, জামদানি কখনোই ধোয়া যাবে না।
জামদানি শাড়ির সবচেয়ে বড় শত্রু পানি। এটি কখনো ধোয়া যাবে না। চলাফেরার সময়ও চেষ্টা করুন যাতে শাড়ির উপর পানি বা ঘাম লেগে না যায়। একবার পড়ার পর শাড়িটি সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেলুন, যাতে কোনো আর্দ্রতা বা ক্ষতি না ঘটে।
৩। আমাদের কাটাওয়াশ সার্ভিস, শাড়ি নতুনের মতো রাখুন।
* ৬-৮ মাস পরপর কাটাওয়াশ সার্ভিস করানো অত্যন্ত জরুরি।
* শাড়ি যদি কোথাও ফেঁসে যায় বা ছিঁড়ে যায়, তা নতুনের মতো ঠিক করা হয়।
* রঙ নতুনের মতো উজ্জ্বল হয়।
* কাটাওয়াশের পরে শাড়িটি দেখে মনে হবে একেবারে নতুন কেনা।
* আমাদের ওয়াশের খরচ শাড়ির অবস্থার উপর নির্ভর করে ৩০০-৬০০ টাকা বা কিছু ক্ষেত্রে আরও বেশি হতে পারে।
৪। ভাঁজ করে রাখা নয়, হ্যাংগারে টানিয়ে রাখা উত্তম।
* জামদানি শাড়ি ভাঁজ না করে হ্যাংগারে টানিয়ে রাখা সবচেয়ে ভালো। এতে ভাজের চাপ পড়ে ছিঁড়ে বা ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
* যদি জায়গার সঙ্কট বা অন্য কোনো কারণে ভাঁজ করতে হয়, তাহলে শাড়ির উপর অন্য কোনো শাড়ি বা কাপড় রাখা যাবে না।
* শাড়ি পাশাপাশি দাঁড় করিয়েও রাখা যেতে পারে সুবিধা অনুযায়ী।
* সম্ভব হলে একই ভাজে শাড়ি দীর্ঘদিন না রাখা উত্তম। ভাজের জায়গা সামান্য সামনে বা পিছে পরিবর্তন করলে এক জায়গায় বেশি চাপ পড়ে না।
৫। সতর্কতাঃ দাগ লেগে গেলে নিজে চেষ্টা করবেন না।
অনেকেই জামদানি শাড়িতে খাবার, হলুদের দাগ বা অন্য কোনো দাগ পড়লে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করার উপদেশ দিয়ে থাকেন, পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া, রোদে শুকানো, ধোয়া বা ডলে ওঠানো ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সবই ভুল। এমনকি তাতিরাও এধরনের কিছুর সম্মুখীন হলে শুধুমাত্র আঙুলের মাথায় সামান্য পানি দিয়ে হালকা করে উঠানোর চেষ্টা করেন। আপনি যদি এক্সপার্ট না হন, নিজে কিছু করার চেষ্টা করবেন না। সামান্য ভুলের কারণে হাজার বা লাখ টাকার শাড়ি নষ্ট হতে পারে।
* সমাধান: যত দ্রুত সম্ভব শাড়ি কাটাওয়াশ করানো। আমাদের কাছ থেকে করাতে পারেন বা পরিচিত কারো মাধ্যমে করাতে পারেন। কাটাওয়াশ ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করবেন না।
৬। সংরক্ষণঃ শাড়ি সুরক্ষিত রাখার নিয়ম।
জামদানি শাড়ি এমন জায়গায় রাখা উচিত যেখানে ধুলাবালি পড়বে না। পলিথিনে রাখা ঠিক নয়, এতে শাড়িতে দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে। সম্ভব হলে পরিষ্কার কোনো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখুন, না রাখলেও খুব বেশি সমস্যা হয় না। সাথে লবঙ্গ বা নিমপাতা রাখলে পোকামাকড়ের ক্ষতি রোধ করা যায়। মাঝে মাঝে শাড়িটি হালকা রোদে শুকানো ভালো। তবে রোদের তাপ খুব বেশি নয় এবং শাড়ি দীর্ঘ সময় রোদে রাখবেন না, এতে রঙের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।