The Art of Katawash

জামদানি শাড়ির যত্নে ‘কাটাওয়াশ’—ঐতিহ্যের পুনর্জন্ম

 

জামদানি শাড়ির সৌন্দর্য কেবল এর সূক্ষ্ম বুননে নয়, এর সঠিক যত্নের উপরেও নির্ভরশীল। যেহেতু জামদানি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম, তাই সাধারণ পোশাকের মতো একে ধোয়া বা পরিষ্কার করা যায় না। আর এখানেই প্রয়োজন হয় বিশেষ পরিচর্যার পদ্ধতি—কাটাওয়াশ (Katawash)

 

কাটাওয়াশ কেন অপরিহার্য?

কাটাওয়াশ হলো জামদানি শাড়ির জন্য নিবেদিত এক ঐতিহ্যবাহী ও বৈজ্ঞানিক পরিচর্যা পদ্ধতি। এটি শাড়ির সৌন্দর্য, মান এবং স্থায়িত্ব বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • পরিষ্কার ও দাগমুক্ত করা: একটি শাড়ি দীর্ঘ সময় ব্যবহারের ফলে শাড়িতে যে কোনো ধরনের হালকা দাগ, অপরিষ্কার বা তৈলাক্ত ভাব লাগলে কাটাওয়াশের মাধ্যমে তা দক্ষতার সাথে ধুয়ে ফেলা যায়। এর ফলে শাড়ি হয় দাগমুক্ত এবং উজ্জ্বল।
  • কাটাই বা মেরামত: শাড়ির কোনো অংশ যদি অসাবধানতাবশত কেটে যায় বা ফেঁসে যায়, তবে এই পদ্ধতির সঙ্গেই চলে ‘কাটাই’-এর কাজ। দক্ষ কারিগরেরা সূক্ষ্ম বুননের মাধ্যমে ছেঁড়া অংশটিকে এমনভাবে মেরামত করেন যে তা প্রায় নতুন শাড়ির মতোই অবিকল হয়ে ওঠে।

 

কাটাওয়াশের সঠিক প্রক্রিয়া (ভাতের মাড়ের ব্যবহার)

এই পদ্ধতিটি মূলত ভাতের মাড় (Starch/Pith) ব্যবহার করে শাড়িকে টানটান করে বিশেষভাবে মুছে বা ধুয়ে পরিষ্কার করার একটি কৌশল।

  • প্রথমে শাড়িটিকে টানটান করে রাখা হয়।
  • একটি পরিষ্কার কাপড়কে ভাতের মাড়ে ভিজিয়ে তা দিয়ে আলতোভাবে শাড়িটিকে ধোয়া বা মোছা হয়। এর ফলে শাড়ির বুননে কোনো ক্ষতি হয় না।
  • এই প্রক্রিয়ার জন্য তীব্র রোদ (Intense Sunlight) অপরিহার্য। কারণ শাড়ি ধোয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটিকে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়।

 

দীর্ঘস্থায়ী যত্নের নির্দেশনা

একটি জামদানি শাড়ি দীর্ঘকাল ধরে নতুনের মতো রাখতে হলে:

  • সংরক্ষণ: প্রতিবার ব্যবহারের পর শাড়ি খুলে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয় (রোদে কিংবা বাতাসে)। এরপর শাড়িটি ভাঁজ করে না রেখে হ্যাঙ্গারে টানিয়ে রাখতে হবে।
  • নিয়মিত পরিচর্যা: শাড়ির গুণগত মান, রঙ এবং বুনন অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রতি ৬ থেকে ৮ মাস অন্তর নিয়ম মেনে কাটাওয়াশ বা কাটাই করিয়ে নেওয়া আবশ্যক।
  • পানির স্পর্শ থেকে সুরক্ষা: জামদানি শাড়ির অন্যতম প্রধান শত্রু হলো জল বা আর্দ্রতা। সরাসরি পানি লাগলে শাড়ির সূক্ষ্ম তন্তু এবং বুনন নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাটাওয়াশ পদ্ধতিতে জলীয় উপাদানের ব্যবহার অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।

কাটাওয়াশের মাধ্যমে একটি ব্যবহৃত বা বহু পুরনো জামদানি শাড়িও নতুনের মতো অবস্থায় ফিরে আসে। ফলস্বরূপ, আপনার শখের জামদানি কেবল আপনার জন্য নয়, তা পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও পরিধানের উপযোগী এবং মূল্যবান ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষিত থাকে।

Scroll to Top